এম. আজিজুল হক
২১/০৬/২০১৩
পড়াশোনায় অমনযোগী ছেলে পরীক্ষায় অকৃতকার্য হয়েছে,
বাবা তাকে প্রাণ খুলে বকাবকি করছে।
“তোমাকে জন্মদিয়ে, এত কষ্ট করে লালন-পালন করে
কী লাভ আমার?
আমার মনের এতটুকু আশা যদি পূরণ করতে না পারো
তবে আমার বাড়ি থেকে বেড় হয়ে যাও।”
অধৈর্য সন্তান বাবাকে বলল,
“আমি তো তোমাকে বলিনি যে আমাকে জন্ম দাও,
আর আমাকে দিয়ে তোমার আশা-আকাংক্ষা পূরণ কর।”
এ কথা বলে ছেলে বাবার সামনে দিয়ে হন্হন্ করে হেঁঠে চলে গেল।
আশাহত, অতৃপ্ত, ভগ্নহৃদয়ী বাবা এবার নিজের কথা ভাবতে লাগলো।
আমার বাবা-মা আমাকে জন্ম দিয়েছিলো কারণ-
আমার জন্ম না হলে তাদের বংশ রক্ষা হত না,
আবার সমাজেও মুখ দেখাতে পারতো না,
আমার মাকে বলা হত বেঁজে এবং বাবাকে বলা হত অক্ষম।
জন্ম যখন দিলই, এবার তো পড়াশোনা করাতে হবে কারণ-
তা না হলে সমাজে মুখ থাকবে না,
লোকে বলবে, “শুধু জন্মই দিয়েছে, মানুষ করলো না”।
তাছাড়া বাবা-মায়ের খায়েশও তো আমাকে দিয়েই মেটাতে হবে,
আমাকেই হতে হবে ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, পাইলট
যা বাবা হতে পারেনি।
তারপর আমাকে চাকরি ধরতে হবে কারণ-
আমার একটা গতি না হলে মা-বাবা নাকি মরেও শান্তি পাবে না।
তারা মরনের পরেও শান্তি চায়
অথচ আমি আমার জীবনেও উদ্দেশ্যই খুঁজে পেলাম না।
তারপর আমাকে বিয়ে করতে হবে,
তবে এখানে আমার প্রয়োজন মুখ্য নয়,
স্রষ্ঠার আদেশ, না করলে জাহান্নামী হব।
তারপর সেই একই কারণে সন্তান জন্ম দেয়া
যে কারনে আমার বাবা দিয়েছিলেন।
গাধার মত খেটে স্ত্রী-সন্তান লালন-পালন করা।
এখানেও আমার প্রয়োজন মুখ্য নয়,
সমাজের নিয়ম-ই মুখ্য।
ছেলেকে পড়াশোনা করিয়ে চাকরি দিতে হবে,
মেয়েকে চোখে চোখে রেখে ভালো পাত্র দেখে বিয়ে দিতে হবে
তা না হলে আমার উপর অর্পিত দায়িত্বের অবহেলা হবে।
অথচ আমি কাউকে বলিনি যে আমাকে এমন দায়িত্ব দাও।
আমার কথা কেউ ভাবেনা,
সবার কথা আমাকে ভাবতে হবে,
সব কিছুই করলাম বাবা, মা, স্ত্রী, সন্তান আর সমাজের জন্য,
আমার জন্য কী করলাম?
আমি সবার জন্য কিন্তু আমার জন্য কে?
কেউ নয়, শুধু আমিই আমার।
তারপর স্রষ্ঠার এক এজেন্ট এসে আমাকে বলল,
“তোমাকে আবার আগের জায়গায় ফিরে যেতে হবে”।
আমি এবাদত করলে তার নাকি ভালো লাগে
তাই আমাকে সৃষ্টি করা,
অথচ আমি তাকে বলিনি যে আমাকে সৃষ্টি কর,
তা হলে কেন আমাকে নিয়ে এই খেলা?
এমন চিন্তা করতে করতে হটাৎ সম্বতি ফিরে পেয়ে বাবা বলল,
“আস্তাগফিরুল্লাহ্, নাউযুবিল্লাহ”।